চাহিদার প্রশ্নটা প্রবল হয়ে ওঠে যখন অধিকার বিষয়টি অবহেলার শিকার হয়। প্রশ্ন হতে পারে অবহেলাটা এত গুরুত্তবহ কেন! হতাশাই কি অবহেলার অনুভূতি সৃষ্টি করে না? নাকি অবহেলার ফলস্বরূপ হতাশা জন্ম নেয়?

একজন পিতা তার সন্তানের কাছে সবসময় ছায়ার মতন থাকতে চান, তেমনি সন্তান আশা করে তার বাবার কাছে সবসময় অর্থবহ থাকতে। আসলে সবসময় তা সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ বলে কথা! মন মস্তিস্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। পিতার মতই স্বামী/স্ত্রী একজন আরেকজনের কাছে অধিকার আশা করে। যেমনটি প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্ক অধিকারের মায়াজালে আড়ষ্ট।

কিন্তু অধিকারের প্রশ্ন আসছে কেন? লেখনীটার মূল বিষয় 'চাহিদা', কিন্তু এরা একে অপরের সাথে যুক্ত। আর্থিক চাহিদা আর মানসিক চাহিদা ভিন্ন বিষয়। অর্থ থাকলে চাহিদার সৃষ্টি হয়, কিন্তু মনের চাহিদা আসলে অধিকার থেকেই সৃষ্ট। উদাহরণস্বরূপ - খুব কাছের বন্ধুকে আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন আপনার যেকোনো আকাঙ্খা কিন্তু নামমাত্র বন্ধুকে একটা coke খাওয়ানোর আবদারটা আপনাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। 

একজন বন্ধু তাই সময়ের সাথে অধিকারটাকেআরো প্রবল করে তুলতে চায় শুধুমাত্র সম্পর্কটাকে আরও গভীর করবার জন্য। নিছক কিছু প্রাপ্তির আশায় কেউ এমনটি করে না। যেকোনো বিপদ-ই হউক না কেন, বন্ধু সর্বদা আশা করে যে সর্বপ্রথম তাকেই স্মরণ করা হবে। এর বিপরীত ঘটনা সম্পর্ককে হাল্কা করে তুলতে পারে। বিষয়টি আরো বেশি ঝামেলাপূর্ণ হয় যখন সেটা পারিবারিক সম্পর্কের ভেতরে থাকে। একজন বাবা কখনই মুখ ফুটে তার ছেলেকে বলতে পারেন না যে আজকাল তার ছেলে বন্ধুদের দ্বারস্থ হচ্ছে বেশি। তিনি মেনে নেওার চেষ্টা করেন, কিন্তু কতদূর পর্যন্ত? হাঁ হতে পারে কোন বিষয়ে বাবার জ্ঞান স্বল্প, এর চেয়ে বন্ধুর সমাধানটুকু গ্রহণীয়। সেক্ষেত্রে একজন বাবা তো জেনেশুনে তার ছেলেকে বিপদে ঠেলে দিতে পারেন না, কিন্তু বাবার প্রত্যাশাটা খুবী ক্ষুদ্র-ছেলে যেন তাকেই প্রথমে বিষয়টি অবগত করে। বাবার এই চাহিদা কি অধিকার থেকেই জন্ম নয়?

আমরা সবাই একে অন্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে চাই- এটাই আমাদের মূল চাহিদা, আর সেটা বড় বেশি আকাঙ্ক্ষার যখন সেখানে অধিকারটুকু বেশি থাকে। যা আমরা হাল্কাভাবে নিতে চাই, অনেকের কাছে সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা অধিকার থেকেই চাহিদাটা ক্রমশ বেড়ে যায়- কিন্তু প্রায়শই আমরা এই নিতান্ত বিষয়টি অবহেলা করি- আর ভুলে যাই সম্পর্কের গভীরতাকে!
 
ছুটির দিন বলে কথা, নইলে কি আর কর্মজীবী মানুষ এতটা অস্থির বোধ করবে? সপ্তাহের ৫ টি দিন কলুর বলদের মত খাটুনীর পর সবারি মনে হয় বন্ধের দুইটি দিন কুম্ভকর্ণের মত টানা ঘুম দিবে, আর তাই ত
 মানুষ আজ বড় ব্যস্ত। এর ওপর আবার যুক্ত হয়েছে ' ফেসবুক '! গভীর রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আধো খোলা চোখে মোবাইল টিপে সবার 'আপডেটেড স্ট্যাটাস' না দেখলে ঘুমটা যে আর আসে না!!

সময়ের প্রবহমানতায় নিজেদেরকে একটু সময় দিতে আমরা এতটাই কার্পণ্য করি যে, ব্যস্ততার আড়ালে আমাদের মননশীলতা বড় বেশী 'অলস' হয়েছে। ভেবে দেখুনতো, আজ থেকে ৬/৭ বছর আগে ছুটির দিনগুলোতে আপনি কি করতেন? কিছু option দিচ্ছিঃ

১. সকাল ১১ টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে দুপুরে পরিবারের সাথে খাওয়া, এরপর কিছু হাবিযাবি কাজ শেষে বিকেলে পরিবারসহ কোথাও ঘুরতে যাওয়া।
২. কাছাকাছি পরিবার না থাকলে, বন্ধুদের সাথেই আড্ডা মারা, পাড়ার মোড়ের চা এর দোকানে বসে তুমুল হট্টগোল করা আর বেহিসাবি সিগারেট পোড়ানো!
৩. যেখানে যার সাথেই কাটাই না কেন, বিকেলে খোলা মাঠে কিছু একটা খেলায় ব্যস্ত থাকা। সন্ধ্যায় আত্মীয়দের বাসায় না গেলে দিনটা অপূর্ণই থেকে যায়।

হয়ত কারো ক্ষেত্রে সব গুলই প্রযোজ্য নতুবা পুরটাই 'bogus'। কিন্তু একবার অন্তত ভাবুন তো, চাকুরীজীবী হউন অথবা বিদেশে গবেষণারত হউন, 'weekdays' আর 'weekends'  গুলো আপনি কেমন করে কাটাচ্ছেন? হয়ত যুক্তি দিয়ে বলবেন যে " এখানে ভাই, পরিবার/বন্ধু কোথায় পেলেন যে সময়টা আগের মত কাটাব? " হ্যাঁ, আপনার কথাটা একদম ঠিক, কিন্তু আপনার আশে পাশে কি আসলেই বন্ধু নেই? নাকি ডিজিটাল বন্ধু আর ল্যাপটপের মায়াজালে আটকা পড়া আপনার অলস শরীরটাকে একটু দুকদম হাঁটিয়ে সামনের বাসায় আপনার মতই ব্যস্ত আলসেটাকে ডেকে বলবেন "কীরে, ছুটির দিনেও ঘুমালে কাজের দিনে করবি টা কী????